ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
সারাবাংলা

রাজশাহীর ফসলি জমিতে পুকুর খনন মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

রাজশাহী প্রতিনিধি:

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০১:০৬ পিএম

Sports Banner
রাজশাহীর ফসলি জমিতে পুকুর খনন মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
পুকুর খনন ছবি

রাজশাহীর বাগমারায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। এতে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে।

সরেজমিনে উপজেলার পশ্চিম বাগমারার প্রানকেন্দ্র হাটগাঙ্গোপাড়া কেন্দ্রিক আউচপাড়া, শুভডাঙ্গা, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় জমির প্রকৃতি পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা গেছে। কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে এখন জলাশয় করা হয়েছে। জলাশয়ের চারপাশে রয়েছে উঁচু পাড়। এ ছাড়া এসব এলাকার কৃষিজমিতে খননযন্ত্র বসিয়ে এখনো পুকুর খনন করা হচ্ছে। অথচ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে, জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না।

আরো পড়ুন: বড় মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে ছোট মেয়েকে বিক্রি

নীতিমালা জারির পর থেকে কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে এসকল এলাকায় প্রায় ২০টি পুকুর খনন করা হয়েছে এবং আরও ৬টি পুকুর খননকাজ অবাধে চলমান রয়েছে। এসকল এলাকার অবৈধ পুকুর খননে চলমান কাজগুলো হলো, আউচপাড়া ইউনিয়নে বেলঘরিয়া সোনাদীঘি বাজার সংলগ্ন ১টি এবং একই ইউনিয়নের মঙ্গলপুর, সমাসপুর গ্রামের মাঝখানে ১টি এবং ঐ ইউনিয়নের মুগাইপাড়ার পার্শ্বে বগপাড়া মোড়ের নিচে ১টি ও খুদাপুর গ্রামে আরো ১টি। গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের সালজুর রুহিয়া মাহামতপুর গ্রামে চেয়ারম্যান শ্রী বিজন কুমার এর ভাটার পার্শ্বে ১টি, শুভডাঙ্গা ইউনিয়নে মচমইল বাজারের হাটগাঙ্গোপাড়া রাস্তা সংলগ্ন ১টি।

আরো পড়ুন: স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ, বন্ধুকে নৃসংশভাবে খুন করে প্রতিশোধ

গত বছরের ১১ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এ টি এম আজাহারুল ইসলামের স্বাক্ষর করা নীতিমালা সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কৃষিজমি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করতে হবে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জমির প্রকৃতিগত কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। এই চিঠির অনুলিপি গত বছরের ২২ শে জুলাই রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছায়। একই সময়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠির একটি অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে বলে উভয় দপ্তরের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন: বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি নয়, লাশ চিতায় উঠল নববধূর

ইউএনও কে গত ডিসেম্বর ও চলতি মাসে দেওয়া ওই সব এলাকার শতাধিক কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করছেন। অভিযোগে তাঁরা বলেছেন, প্রথমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা স্থানীয় কিছু লোকজনের কাছ থেকে কৃষিজমি তিন বা ১০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে সেখানে পুকুর খনন শুরু করেন। পরে কৌশলে ওই পুকুরের আশপাশের অন্য জমির মালিককেও তাঁদের জমি ইজারা দিতে বাধ্য করেন।

এ সকল এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের জমি প্রথমে দেননি। ইজারা নেওয়া আশপাশের জমিতে ড্রেজার দিয়ে খনন শুরু করা হয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাঁদের জমিও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পুকুর খননের জন্য দিতে হয়। উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সালমারা বিলে পানি নিস্কাশনের নাম করে জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন প্রভাবশালী ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করছে। ঐ পুকুরের পার্শ্বেই একটি ড্রামচিমনি ভাটার মালিক শফিক পুকুর খননে সার্বিক সহযোগিতায় আছেন বলে এলাকাবাসি জানান।

আরো পড়ুনঃ কালীগঞ্জে স্বামীর ধাক্কায় দেয়ালে লেগে স্ত্রী মৃত্যু, স্বামী পলাতক

অপরদিকে, নয়ন তার দলবল নিয়ে এমপি ও মেয়রের জামাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় দিব্বি পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরা এতটাই শক্তিশালী যে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ভেকু গাড়ির চাবি নিয়ে আসলেও তা আবার ফেরত দিতে বাধ্য হয় বলে দাম্ভিকতার সহিত বলেন এই নয়ন। 

সেখানে প্রায় ২০টি ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে প্রভাবশালীরা ক্ষমতা দেখিয়ে রাস্তায় ধুলামাটি ফেলে জনগন, মিডিয়া, প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে নিজ স্বার্থে ব্যাস্ত এসকল ইটভাটার মালিকারা। তাদের মধ্যে জাফর মাস্টার অন্যতম। ঐ রাস্তায় চলাচলে পথচারিরা বলেন, ঘন কুয়াশায় ঢাঁকা এসব ধুলামাটির মধ্য দিয়েই আমাদের নিত্যদিনের যাতায়াত। শীঘ্রই এর সুব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার বাসিন্দা ও পথচারিরা।

আরো পড়ুনঃ ঝিনাইদহে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম

এ সকল বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (নির্বাহী মেজিস্ট্রেট) মো: শরীফ আহম্মেদ জানান, মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ পুকুর খননে জমির শ্রেনি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, কোন অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর