ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
সারাবাংলা

মেয়েকে কখনো নিজ বাড়িতে, কখনো ঢাকা-চট্টগ্রামে যৌন কাজে পাঠাতেন মা

প্রকাশ: মার্চ ৩, ২০২১, ০১:৫৮ পিএম

Sports Banner
মেয়েকে কখনো নিজ বাড়িতে, কখনো ঢাকা-চট্টগ্রামে যৌন কাজে পাঠাতেন মা
ছবি । প্রতীকী

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নে মাদ্রাসাছাত্রীকে একাধিক বার গণধর্ষণ করা হয় এবং ভিডিও ধারণ ও অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী বিউটি আক্তারের বিরুদ্ধে এবার মামলা করেছে পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে যে বিউটি নিজের মেয়েকে (১৭) জোরপূর্বক যৌন ব্যবসায় বাধ্য করে। মামলায় বিউটি ছাড়াও আলাইয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানসহ আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে বেগমগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, মামলায় অভিযুক্ত ১ নম্বর আসামি গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মেয়েকে (১৭) ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে ছবি ধারণ ও অপরহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চারজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে আসামি ফয়সাল, সাইফুল ইসলাম ইমন ও জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাভারের পূরগাও এলাকার রুবি নামের একজনের বাসা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ভিকিটিম অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ বিচারকের কাছে স্বেচ্ছায় ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশ  সূত্র আরও জানায়, জবানবন্দি ও মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে ২০১৮ সালে ভিকটিম ধীতপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া লেখা করত। ২০১৭ সাল থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত ভিকটিমকে দিয়ে তার মা বিউটি আক্তার জোর করে টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা করাত। বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের মেয়েকে কখনো নিজ বাড়িতে, কখনো ঢাকা-চট্টগ্রামের যৌন কাজের জন্য পাঠাতেন বিউটি।

আরো পড়ুন: যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা করলো ঘাতক স্বামী 

বিষয়টির প্রতিবাদ করলে কয়েকবার ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে মারধর করেন বিউটি। আগের মামলার সাক্ষী ও বর্তমান মামলার আসামি মোজ্জামেল হোসেন বিউটিকে টাকা দিয়ে ঘরে এসে ওই ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। একরাতে মোজাম্মেলের সাথে যৌন কাজে লিপ্ত হলে স্থানীয় ফয়সাল ও জোবায়ের দেখে তাদের দুইজনের বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। পরে তার মোজাম্মেলকে বের করে দিয়ে ওই রাতে ভিকটিমকে গণধর্ষণ করে ফয়সাল ও জোবায়ের। পরে বিউটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার বাড়িতে পাঠায় ওইছাত্রীকে। চেয়ারম্যান আনিস নিজ বাড়িতে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে ভিকটিমকে।

আরো পড়ুন: কলেজছাত্রীকে হত্যা করে মরদেহ হাসপাতালে ফেলে গেলো

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেলে আলাইয়াপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ড নাফিতের পোল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও হীরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন জানান, ভিকটিম ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দির আলোকে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ওই ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন, আটক রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্যকরণ, অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে যৌন শোষণ ও স্থানান্তরিত করে যৌনকর্ম করার অপরাধে বিউটি ও চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন আরও জানান, ঘটনায় গ্রেপ্তার বিউটিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যান আনিসসহ মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান সিকদার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ, অপরহণ, নগ্ন ভিডিও ধারণের ঘটনায় আগে দুটি ও মানব পাচার দমন আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর