ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
সারাবাংলা

ঝিনাইদহে প্রতারক চক্রের আস্তানা, হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: মার্চ ৪, ২০২১, ১০:৪৮ এএম

Sports Banner
ঝিনাইদহে প্রতারক চক্রের আস্তানা, হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা!
প্রতারক চক্রের ছবি

কার্ড ঘষলেই মিলবে টিভি-ফ্রীজ! ঝিনাইদহ জেলা জুড়েই রয়েছে প্রতারক চক্রের আস্তানা। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা! মাত্র ১শ টাকায় কার্ড ঘষলেই মিলবে টিভি, ফ্রীজ, সেলাই মেশিন সহ নামী দামী ইলেকট্রনিকস পণ্য-সামগ্রী। এমন প্রলোভন দেখিয়ে একটি প্রতারকচক্র দারিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অথচ কার্ড ঘষে মিলছে রাইস কুকার, বেলেন্ডার, গ্যাসের চুলা সহ নিন্মমানের এক একটি সামগ্রী, সেগুলো আবার কিনতে হচ্ছে ১৫শ টাকা দরে। নেই কোন টিভি-ফ্রীজ বা দামী সামগ্রী। তখন বলা হয়েছে কোম্পানীর ছাড় আছে ১৫ টি কার্ড নিলে এসব মিলবে! ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শিক্ষক পাড়াতে আবু বাশার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নামের এক সাবেক ব্যাংকার ও তার স্ত্রী জাতীয় পার্টির শৈলকুপা উপজেলা শাখার সভাপতি মনিকা আলমের বাসাতে প্রতারক চক্র পাতে এমন ফাঁদ। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে এই চক্র রাজবাড়ী, নড়াইলের লোহাগাড়া, মাগুরা সদরে এমন কার্ড লটারী বেঁচে টাকা হাতিয়ে ১ মাস পর পর রাতের আঁধারে পালিয়ে নতুন নতুন জেলাতে আস্তানা পাতে। সর্বশেষ তাদের অবস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায়। ফেব্রুয়ারির শুরুতে অতি গোপনে বেশ কয়েকজন তরুন-তরুনী নিয়ে গড়ে ওঠা চক্রটি শৈলকুপার শিক্ষকপাড়ার এই বাড়িতে আস্তানা পাতে। 

আরো পড়ুন: শারীরিক অবস্থা দেখে করোনা টিকা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে

এর আগে তাদের অবস্থান ছিল মাগুরা জেলার সদর উপজেলার পারনান্দুয়ালী পল্লী বিদ্যুৎপাড়াতে। সেখানে বাটুল মুন্সী নামে এক ব্যাক্তির দোকানের ঠিকানা ব্যবহার করে এবং একটি বাসা ভাড়া নিয়ে শুরু করে প্রতারনা। বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলের দারিদ্র-শ্রমজীবি মানুষগুলো টার্গেট করে। ইটভাটাগুলো চক্রটির প্রধান টার্গেট। ২নং আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে কামারবাড়ি শাপলাবাটা মোড়ে রয়েছে ইটভাটা। সেই ভাটার শ্রমিক মনজিলা, রেহেনা সহ অসংখ্য নারী ও পুরুষ শ্রমিক খুব সহজেই তাদের যাপিত জীবনের রান্নাবান্না আর ঘরগৃহস্থালীর সামগ্রী পরিপাটি করতে ঝুঁকে পড়ে কার্ড ঘষলেই টিভি-ফ্রীজের চটকদারী গোলকধাঁধায়। পটে যায় তরুণ-তরুণীদের হাতে থাকা কার্ড কিনতে। এক এক শ্রমিক ১৫-২০ টা করে কার্ড কেনে তবে সেসব কার্ডে মেলেনি তাদের টিভি-ফ্রীজ। খুঁজতে গিয়ে দেখে রাতের আঁধারে পালিয়েছে তারা। ঝিনাইদহের শৈলকুপার শিক্ষকপাড়ায় যখন চক্রটির সন্ধান পায় তখন মাগুরা থেকে ইটভাটার শ্রমিকগুলো আসে শৈলকুপা। তারা থানা পুলিশ কে অবগত করে। বিচার ও গ্রেফতার দাবি জানায়। 

আরো পড়ুন: যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস, মন্ত্রীর পদত্যাগ

ভাটা শ্রমিক আরিফ গাজি জানায়, তারা শৈলকুপা থানায় গিয়ে পুলিশ কে জানায় প্রতারক চক্রের কথা। পুলিশ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাতীয় পার্টির নেত্রী মনিকা আলম ও সাবেক ব্যাংকারের বাসায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। পুলিশের খোঁজাখুজিতে ফাঁদপাতা চক্রটি তাড়াহুড়া করে ক্ষতিপূরণ দেয় কয়েজন শ্রমিকের। সেখানকার কয়েক নারী কর্মীও সরে পড়ে। কার্ড ঘষলেই টিভি-ফ্রীজ সহ এমন লোভনীয় ফাঁদে পড়তে শুরু করেছে শৈলকুপার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কবিরপুর, ঝাউদিয়া সহ ইটভাটাগুলিতে চলছে প্রতারক চক্রের লাখ লাখ টাকার ব্যবসা। ঝিনাইদহের শৈলকুপার  শিক্ষক পাড়াতে জাতীয় পার্টির উপজেলা শাখার সভাপতি মনিকা আলমের বাড়িতে এই প্রতারক চক্রের আস্তানার খবরে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসেদপুর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একদল তরুণ-তরুণী ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে উঠে এই বাসাতে। নেই কোন সাইনবোর্ড, বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র এমনকি কোন কাগজপত্র নেই, বাসা ভাড়ার জন্য ভাড়াটিয়া এলে থানাতে এন্ট্রি করাতে হয়, সেসবের কিছুই মানেনি এই চক্র। 

আরো পড়ুন: ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভাড়াটিয়া এলে বাসার মালিক থানাতে সেসবের এন্ট্রি করবে এমন নিয়ম রয়েছে। এদিকে প্রতারক চক্রটির প্রধান রেশমা ইলেকট্রনিকস গ্যালারীর ম্যানেজার হিসাবে লোকমান হোসেন নামের এক যুবক নিজেকে পরিচয় দেয়, সে জানায় ঢাকায় তাদের শোরুম রয়েছে। এর আগে মাগুরায় ছিল তবে সেখানে পন্য বিক্রি না হওয়ায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা চলে আসে বলে স্বীকার করে। কোন ট্রেড লাইসেন্স বা কাগজপত্র ছাড়া কিভাবে এসব কার্ড লটারী বিক্রি করছে? এমন প্রশ্নে সে জানায়, নতুন নতুন এসেছে পরে ট্রেড লাইসেন্স করবে, বাসার মালিক ও জাতীয় পার্টির নেত্রী বিষয়টি দেখছে। এই চক্রের নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানায় তারা শোরুম থেকে এসেছে, কোম্পানী নামী-দামী  পণ্যের বিশেষ ছাড় দিয়েছে যা কার্ড ঘষলেই মিলবে। মুক্তা ও রিয়া নামের এ দুই কর্মী জানায় তারা বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে এভাবে পন্য বিক্রি করছে। বিভিন্ন ইটভাটা শ্রমিকও তাদের প্রধান কাস্টমার। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বিষয়টি জানাজানি হলে পরে চক্রটি শৈলকুপা পৌরসভা থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স নেয়। কিন্তু থানাতে তাদের কোন কাগজপত্র এন্ট্রি করা নেই। এমন ফাঁদের বিষয়ে বাসার মালিক সাবেক ব্যাংকার আবু বাশার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি চটে যান। অনুমতি না নিয়ে কেন তাদের ভাড়াটিয়াদের নিয়ে খোঁজ-খবর করা হচ্ছে সে প্রশ্ন তোলেন। জাতীয় পার্টির নেত্রী মনিকা আলমও তার স্বামীর সাথে শুর মিলিয়ে ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।

এছাড়া এই চক্রটি কোটচাঁদপুর পৌর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ব্যাবসা করছে ও সদর উপজেলার সাধুহাটি এলাকায়ও এদের আস্তানা রয়েছে। সেখানেও সহজ সরল মানুষকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কার্ড ঘষে হাতিয়ে নিচ্ছে লাল লাখ।

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর