ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
আন্তর্জাতিক

খ্যাতিমান ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদ আর নেই

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম

Sports Banner
খ্যাতিমান ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদ আর নেই

খ্যাতিমান ব্যাংকার, কলামিস্ট ও শিশুসাহিত্যিক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ৬টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

তিনি মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর হিসাবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ শোক প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় তারা বলেছেন, প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদের মৃত্যুতে দেশের আর্থিক খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। এছাড়া তার মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা শোক জানিয়েছেন। ঢাকায় দুটি এবং পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জে তৃতীয় জানাজা শেষে বুধবারই তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, করোনায় আক্রান্ত হলে ১ ফেব্র“য়ারি ইব্রাহিম খালেদকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯ ফেব্র“য়ারি থেকে ইব্রাহিম খালেদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার ফুসফুসের ৫০ শতাংশ সংক্রমিত হয়েছিল। অবস্থার বেশি অবনতি হলে ২১ ফেব্র“য়ারি তাকে বিএসএমএমইউর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। আর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ২৪ ফেব্র“য়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

ইব্রাহিম খালেদ ব্যাংক ও আর্থিক খাত এবং শেয়ারবাজারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছেন। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এ অর্থনীতিবিদ। এ সময়ে তিনি রাঘববোয়ালদের নাম তুলে আনার পাশাপাশি তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে সরকার।

১৯৪১ সালের ৪ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জন্ম গ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি আর্থিক খাতের সংস্কারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্না তকোত্তর ও আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৩ সালে ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত হন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ১৯৯৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক এবং ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন।

তিনি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত । এরপর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। সবশেষে তিনি ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে পূবালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

ব্যাংকিং ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ইব্রাহিম খালেদকে ২০০৯ সালে ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ ও ২০১৩ সালে ‘খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী’ জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়। ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি দেয় সম্মানসূচক ফেলোশিপ।

এ ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচি-কাঁচা ভবনে বেলা ১১টায় তার প্রথম জানাজা হয়। এরপর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে গোপালগঞ্জে নেওয়া হয়। সেখানে আরেকবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা এ দেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

এছাড়া ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে মৎস্য ও পশুপালনমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
 

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর